সমন্বয় কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য ?

Share Knowledge

সমন্বয় হল ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । একটি সংস্থার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমন্বয় সেই সংস্থার সকল বিভাগ ও ব্যক্তিকে একসাথে কাজ করতে সহায়তা করে। এটি সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে একধরনের সাদৃশ্য এবং সামঞ্জস্য বজায় রাখে।

সমন্বয় কাকে বলে ?

সমন্বয় হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার সমস্ত ব্যক্তি, বিভাগ ও কার্যক্রমের মধ্যে একীকরণ সৃষ্টি করা হয়। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একীকরণ থাকায় নির্ধারিত লক্ষ্যকে  অর্জন করা সম্ভব হয়। সমন্বয় কোনো পৃথক কার্য নয় বরং এটি ব্যবস্থাপনার সারাংশ। 

E.F.L. Brech-এর মতে – “সমন্বয় হল বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে যথাযথ কাজের বন্টন নিশ্চিত করে এবং সদস্যদের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে কাজগুলি সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করে দলকে ভারসাম্যপূর্ণ ও একত্রিত রাখা”। (“Coordination is balancing and keeping together the team by ensuring suitable allocation of tasks to the various members and seeing that the tasks are performed with harmony among the members themselves.”)

উদাহরণস্বরুপঃ একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সমন্বয়

সমন্বয়কে ভালোভাবে বোঝার জন্য এখানে একটি ফার্নিচার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দেখানো হয়েছে।

ধরা যাক, একটি ফার্নিচার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের চারটি বিভাগ রয়েছে—ক্রয় বিভাগ, উৎপাদন বিভাগ, বিক্রয় বিভাগ, এবং হিসাব বিভাগ। সমন্বয় কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা নীচে দেখানো হল:

  1. ক্রয় বিভাগ কাঁচামাল (যেমন কাঠ, পেইন্ট, এবং ফিটিং ইত্যাদি) সামগ্রী সংগ্রহ করে। সঠিক সময়ে কাঁচামাল সরবরাহ না হলে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
  2. উৎপাদন বিভাগ কাঁচামাল পাওয়ার পর তা ব্যবহার করে নির্ধারিত সময়ে ফার্নিচার তৈরি করে। সঠিক সময়ে উৎপাদন শেষ করে বিক্রয় বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।
  3. বিক্রয় বিভাগ বাজারের চাহিদা বিশ্লেষণ করে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে। যদি উৎপাদন সময়মতো না হয় বা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি না হয়, তবে বিক্রয়ে বাধা সৃষ্টি হবে।
  4. হিসাব বিভাগ  কাঁচামাল কেনার খরচ, কর্মচারীদের বেতন এবং বিক্রয় থেকে অর্জিত আয় নিরীক্ষণ করে। যদি অন্য বিভাগের সাথে আর্থিক তথ্য সংযুক্ত না থাকে  তবে সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা করা সম্ভব হবে না।

উপরোক্ত তথ্য থেকে জানা যায়, যে প্রতিটি বিভাগের কার্যক্রম একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত। সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে উচ্চমানের পণ্য উৎপাদন থেকে বিক্রয় সুস্থভাবে করতে পারে । প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিলে লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।  

সমন্বয়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ (Nature/Feature/Characteristics of Coordination):

১। গোষ্ঠীগত প্রচেষ্টা সংহত করা (Integrates group efforts):

সমন্বয় একটি দলীয় কার্যক্রম যা বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে কাজের সংযোগ স্থাপন সৃষ্টি করে । এটি গোষ্ঠীগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে ।

২। কর্মপরিকল্পনায় ঐক্য নিশ্চিত করা (Ensures unity of action):

সমন্বয় নিশ্চিত করে যে সংস্থার প্রতিটি বিভাগ ও কর্মী নির্ধারিত লক্ষ্যের দিকে কাজ করে। এটি কর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি কোন ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি করে না এবং অনির্দিষ্ট কার্যক্রম দূর করে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

৩। একটানা চলমান প্রক্রিয়া (Continuous process):

সংগঠনের বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত করা হলেও পুনরায় এটি চলতে থাকে । অর্থাৎ সমন্বয় হল একটি চলমান প্রক্রিয়া যা বার বার চলতে থাকে ।

৪। সর্বত্র বিদ্যমান কার্যক্রম (Pervasive function):

সমন্বয় সংগঠনের প্রতিটি বিভাগ, স্তর এবং কার্যক্রমে প্রভাব রয়েছে । এটি ব্যবস্থাপনার উচ্চ, মধ্য এবং নিম্ন স্তরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে ।

৫। সমস্ত পরিচালকের দায়িত্ব (Responsibility of all managers):

সমন্বয় শুধুমাত্র একজন পরিচালকের কাজ নয়, বরং প্রতিটি স্তরের পরিচালকের দায়িত্ব। প্রতিটি স্তরের ব্যবস্থাপক অন্য স্তরের ব্যবস্থাপকের সাথে সংযুক্ত হয়ে তাদের বিভাগের কার্যক্রমকে ভালোভাবে পরিচালিত করা যায় ।

৬। ইচ্ছাকৃত কার্যক্রম (Deliberate function):

সমন্বয় একটি ইচ্ছাকৃত কার্যক্রম যা সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এটি কোনো  স্বতঃসিদ্ধভাবে ঘটে না, অর্থাৎ প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতন প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।

সমন্বয়ের গুরুত্ব (importance of Coordination):

১। আকার বৃদ্ধি (growth in size):

প্রতিষ্ঠানের আকার বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে কর্মীদের সংখ্যা এবং কাজের জটিলতাও বৃদ্ধি পায় । সমন্বয় ব্যক্তিগত লক্ষ্য এবং সাংগঠনিক লক্ষ্যগুলিকে একত্রিত করে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় ।

২। কার্যকরী ভিন্নতা মোকাবিলা(Functional differential):

প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ বিভক্ত থাকায় সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের কাজের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয় । এটি কাজের একত্রীকরণ করে উদ্দেশ্য সফলভাবে অর্জন করা যায় ।

৩। বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা (specialization):

বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই তাদের নিজস্ব পেশাগত জ্ঞান অনুযায়ী কাজ করতে চান। যেটি প্রায় সময় বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে পারে । তাই সমন্বয়ের সাহায্যে তাদের মধ্যে কাজের একত্রীকরণ করে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে পরিচালিত করা যায়।

সমন্বয়ের উদ্দেশ্য (Objectives of coordination)

প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগ এবং ব্যক্তিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সমন্বয়ের কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। সেগুলি হল – 

১। দ্বন্দ্ব এড়ানো (Avoiding conflicts):

প্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ বা ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি বা দ্বন্দ্ব হয়ে থাকে। সমন্বয়ের মাধ্যমে এই সব ভুল বোঝাবুঝি বা দ্বন্দ্ব এরিয়ে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা যায়।

২। লক্ষ্য অর্জন (goal achievement):

সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ বা ব্যক্তিকে একত্রিত করা যায়। এটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। 

৩। সুসম্পর্ক গড়ে তোলা (Harmonious relationship):

প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিভাগ বা ব্যক্তিদের মধ্যে সুসম্পর্ক  থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সমন্বয়ের মাধ্যমে এই সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হয়।

৪। ঐক্য বৃদ্ধিতে সহায়তা (Enhancing unity):

সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে ঐক্যতা সৃষ্টি করে। এটি কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সমর্থন ও বিশ্বাস তৈরি করেন, যা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। 

৫। অর্থনৈতিকতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা (Economy and efficiency):

সমন্বয় দ্বারা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়। এটি অপ্রয়োজনীয় কাজ ও অপচয় কমিয়ে প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সাশ্রয় নিশ্চিত করা যায়।

ব্যবস্থাপনা কাকে বলে: বৈশিষ্ট, গুরুত্ব এবং কার্যাবলী বিস্তারিত আলোচনা?

ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য

পরিকল্পনা কি বা কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব এবং সীমাবদ্ধতাগুলি আলোচনা করো ?

নেতৃত্ব কি ? এর বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী ?


Share Knowledge

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top