ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক কাজ হল পরিকল্পনা করা । প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য পরিকল্পনা করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয় । কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বা পদক্ষেপের দরকার । এই পদক্ষেপ গুলি প্রয়োগযোগ্য বা বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গড়ে তোলে । সেগুলি পদক্ষেপগুলি হল –

১। লক্ষ্য নির্ধারণ (setting objectives):
পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রথম ধাপ হল প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নির্ধারণ করা । যেমন – একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হতে পারে আয় বৃদ্ধি বা শেয়ার মূল্য বাড়ানো ইত্যাদি । লক্ষ্য নির্ধারণ প্রতিস্থানকে দিকনির্দেশনাতে সহায়তা করা এবং পরিকল্পনার অন্য পদক্ষেপ গুলিকে পরিচালিত করে ।
২। বর্তমান পরিস্থিতির বিশ্লেষণ (Analyzing the current situation):
লক্ষ্য নির্ধারণের পরে প্রতিস্থাঙ্কে বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণ করতে হবে । যেমন – বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবেশ, সম্পদ এবং সীমাবদ্ধতা ইত্যাদির বিশ্লেষণ । এর জন্য SWOT (strength, weakness, opportunity, threats) বিশ্লেষণ একটি কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যায় ।
৩। ভবিষ্যতের অনুমান (Future Assumption):
বিশ্লেষণের পর এই ধাপে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে তা সম্পর্কে অনুমান করা হয় । যাতে ভবিষ্যতে কোন ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা, বাজারের পরিবর্তন, এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ইত্যাদির প্রতি রক্ষা করা যায়।
৪। বিকল্প কৌশল নির্ধারণ (identifying alternatives courses of action):
ভবিষ্যৎ অনুমান করার পর প্রতিস্থানকে ভবিষ্যৎ সীমাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে । একাধিক বিকল্প কৌশল থাকলে প্রতিস্থানকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়।
৫। বিকল্পগুলোর মূল্যায়ন (evaluating alternatives):
এই প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত বিভিন্ন বিকল্পগুলির বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা হয় । যাতে প্রতিটি বিকল্পগুলির সম্ভাব্য লাভ, ক্ষতি, ঝুঁকি এবং সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি মূল্যায়ন করে সবচেয়ে কার্যকর এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্প নির্বাচন করা যায় ।
৬। কৌশল নির্বাচন (selecting the best course of action):
বিকল্পগুলির বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করার পর এই ধাপে সবচেয়ে কার্যকর ও সম্ভাব্য কৌশলটি নির্বাচন করা হয় । এখানে একটি কৌশলকে বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত করা হয় যা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণে সর্বোত্তম বলে বিবেচিত হয় ।
৭। কৌশল বাস্তবায়ন (implementation of the action):
এখানে নির্বাচিত কৌশল বা কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করা হয় । যেমন – পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগের কার্যক্রম এবং দায়িত্ব নির্ধারণ, পণ্যের উৎপাদন, এবং বৃদ্ধির জন্য যৌথ উদ্যোগ (joint venture) করা ইত্যাদি।
৮। পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ (Monitoring and controlling):
পরিকল্পনার শেষ ধাপ হল উপরোক্ত কার্যক্রমগুলির পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা । নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কার্যক্রমগুলি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা এবং লক্ষ্য অর্জনের পথে কোনো বাধা আসছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংশোধন করে কার্যক্রমগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় ।
পরিকল্পনা প্রণয়নের এই ৮ টি ধাপ বা প্রক্রিয়া বা পদক্ষেপ গুলি প্রতিষ্ঠানকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়। এই প্রতিটি পদক্ষেপ প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে সহায়তা করে ।