নেতৃত্ব কি? নেতৃত্ব শুধুমাত্র আদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া নয় । এটি একটি গুণ যা একজন ব্যক্তিকে অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করে। আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলী থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা আলোচনা করব নেতৃত্বের ধারণা, এর বৈশিষ্ট্য এবং একজন দক্ষ নেতার গুণাবলী ।
table of content
নেতৃত্ব কি ?
নেতৃত্ব হল একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে একজন ব্যবস্থাপক একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যদের আচরণ এবং কাজের প্রতি আগ্রহ প্রভাবিত করতে পারে । এই যোগ্যতা একজন পরিচালককে দক্ষতার সাথে কাজ করা এবং অন্যদেরকে কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহ করতে পারেন।
নেতৃত্বের সংজ্ঞা কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে ভিন্ন হতে পারে । সেই সংজ্ঞা নিচে দেওয়া হল –
হ্যারল্ড কুন্টজ (Harold Koontz) এবং হেইঞ্জ উইহরিচ (heinz weihrich)-এর মতে – নেতৃত্ব হল মানুষকে বা অন্যদেরকে প্রভাবিত করার শিল্প বা প্রক্রিয়া যাতে তারা স্বেচ্ছায় উৎসাহের সাথে দলগত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে। (leadership is the art or process influencing people so that they will strive willingly enthusiastically towards the achievement of group goals.)
টেনেনবাউম (Tennenbaum)-এর মতে – নেতৃত্ব হল আন্তঃব্যক্তিক প্রভাব যা একটি পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত হয় এবং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের দিকে যোগাযোগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। (leadership is interpersonal influence exercised in a situation and directed through communication process towards the attainment of a specific goal or goals.)
নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য :
১. ক্রমাগত প্রক্রিয়া (continuous process):
নেতৃত্ব হল মানুষের দলকে প্রভাবিত করার একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া। একজন নেতা যদি নিয়মিতভাবে তাদের প্রভাবিত না করে তাহলে তাদের আচরণ এবং আত্মবিশ্বাস কাজের প্রতি আগ্রহ থাকবে না।
২. আন্তঃব্যক্তিক প্রক্রিয়া (interpersonal process):
একজন নেতা তার অনুসারীদের সাথে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলে । যাতে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদেরকে কাজের প্রতি উৎসাহ এবং নির্দেশ দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায় । এই প্রক্রিয়া একজন নেতা এবং তাঁর অনুসারীদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক এবং কাজের মান উন্নত করে।
৩. দলগত প্রক্রিয়া (group process):
নেতৃত্ব আবার একটি দলগত প্রক্রিয়া যেখানে তাঁর অনুসারী দলকে কাজের প্রতি উৎসাহিত করে লক্ষ্য অর্জনে পরিচালিত করে।
৪. নেতা ও অনুসারীদের মধ্যে সম্পর্ক (relation between leader and followers):
একজন দক্ষ নেতা তার অনুসারীদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে। সেই সম্পর্ক নেতা তার অনুসারী দলকে একত্রে উৎসাহিত করে লক্ষ্য অর্জনের দিকে পরিচালিত করা যায় ।
৫. কাজের প্রতি আগ্রহ (Interest in work):
নেতৃত্ব একটি প্রক্রিয়া যেখানে অনুসারীরা নিজের ইচ্ছায় কাজ করতে আগ্রহী থাকেন। অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বের ফলে অনুসারীরা নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য গ্রহণ করে এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে থাকেন।
আরও পড়ুন: নেতৃত্ব কত প্রকার ও কি কি ?
নেতৃত্বের গুণাবলী :
নেতৃত্বের সময় একজন নেতাকে নির্দিষ্ট কিছু গুণাবলীর প্রয়োজন হয় । সেগুলি হল –
১. শারীরিক বৈশিষ্ট্য (physical features):
নেতৃত্বের ক্ষেত্রে শারীরিক বৈশিষ্ট্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ । একজন নেতার ভালো শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং গঠন (যেমন- উচ্চতা, ওজন, স্বাস্থ্য এবং চেহারা ইত্যাদি) তার অনুসারীদের প্রভাবিত করতে সহজ করে তোলে ।
২। জ্ঞান এবং দক্ষতা (knowledge and competence):
একজন নেতাকে কাজের প্রতি জ্ঞান এবং সঠিক দক্ষতা থাকা প্রয়োজন । সঠিক জ্ঞান এবং দক্ষতা নেতাকে প্রশ্নের উত্তর দিতে এবং সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম করে তোলে।
৩. সততা (integrity/honesty):
একজন সফল নেতা হওয়ার জন্য সততা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। সততা এবং নৈতিকতার মাধ্যমে নেতাকে অন্যদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে এবং দলীয় পরিবেশে সহযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি করে।
৪. উদ্যোগী মনোভাব (initiator):
নেতৃত্বের গুণাবলীর মধ্যে একজন নেতাকে উদ্যোগী মনোভাব হতে হবে । দক্ষ নেতা সঠিক সময়ে উদ্যোগ নিতে সক্ষম হন এবং দলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও নতুন কৌশল গ্রহনে সহায়তা করে ।
৫. যোগাযোগ দক্ষতা (communication skills):
একজন নেতাকে অবশ্যই যোগাযোগে দক্ষতা হতে হবে। যাতে সঠিকভাবে নিজের চিন্তা – ভাবনা এবং লক্ষ্যকে প্রকাশ করে তার অনুসারী দলকে পরিচালিত করা যায় ।
৬. অনুপ্রেরনার দক্ষতা (motivation skill):
দলের মধ্যে কাজের প্রতি উৎসাহ এবং আগ্রহ মনোভাব তৈরি করতে একজন নেতাকে অনুপ্রেরণার দক্ষতা হওয়া উচিত। এই দক্ষতা দলের উন্নতি এবং কাজের সফলতার জন্য অপরিহার্য ।
৭. আত্মবিশ্বাস (self-confidence):
আত্মবিশ্বাস নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী । একজন আত্মবিশ্বাসী নেতা দলের সদস্যদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় এবং জটিল পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন । আত্মবিশ্বাসী নেতা দলের মধ্যে সাহস যোগায় এবং উৎসাহিত করে ।
৮. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ (decisiveness):
নেতৃত্বের ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকা প্রয়োজনীয় । কোনো পরিস্থিতিতে একজন দক্ষ নেতা দ্রুত এবং নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন ।
৯. সামাজিক দক্ষতা (social skills):
একজন দক্ষ নেতার কাছে সামাজিক দক্ষতা থাকা আবশ্যক । এই দক্ষতা দলের সদস্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে ।
১০. উচ্চ শক্তি (high energy):
একজন নেতার শারীরিক ও মানসিক শক্তি বিভিন্ন কার্যক্রম করার জন্য উচ্চতে থাকা আবশ্যক । নেতার এই শক্তি দলের সদস্যদের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ এবং উৎসাহ যোগায় ।