একজন নেতাকে নেতৃত্ব করার জন্য নেতৃত্বের প্রকারভেদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট শৈলী (style) গ্রহণ করতে হয়। নেতৃত্বের শৈলী বলতে নেতার দ্বারা গ্রহণ করা একটি আচরণের রুপ বা ধরন যা তার অনুসারীদের আচরণকে প্রভাবিত করেন। নেতৃত্বের মধ্যে বিভিন্ন ধরন বা প্রকার শৈলী রয়েছে। তাই এখানে আমরা জানব নেতৃত্ব কত প্রকার ও কি কি এবং সেটি কিভাবে অন্যদের আচরণকে প্রভাবিত করেন ।
নেতৃত্বের প্রকারভেদ :
নেতৃত্বের শৈলী বা প্রকারভেদ ব্যবসায় সাধারণত পাঁচটি বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। আবার, নেতৃত্বের প্রত্যেক প্রকারভেদের মধ্যে কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে । সেগুলি হল-

১. স্বৈরাচারী/নির্দেশক/একত্ববাদী নেতৃত্ব (Autocratic leadership):
এই প্রকার নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সকল ধরনের সিদ্ধান্ত নেতা দ্বারা গ্রহণ করা হয়। কোন ধরণের সিদ্ধান্তের জন্য তার অনুসারী সদস্যের পরামর্শ নেওয়া হয় না। নেতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার অনুসারীদেরকে সকল ধরনের সিদ্ধান্ত এবং আদেশ মেনে চলতে হবে।
সুবিধা
- অন্যদের পরামর্শ প্রয়োজন নেই দেখে কম সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
- সুনির্দিষ্ট কাঠামো এবং কঠোর নির্দেশনার মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকি কম।
- প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক।
অসুবিধা
- সদস্যদের মতামত না নেওয়ার কারণে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দলের মনোবল কমতে পারে ।
- নেতার উপর উচ্চ নির্ভরশীলতা দলের সৃজনশীলতা (creativity) কমতে পারে।
- সদস্যের মধ্যে অবমূল্যায়িত বোধ তাদের মধ্যে উচ্চ পদত্যাগের প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
২। গণতান্ত্রিক/অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব (democratic/participative leadership):
এই নেতৃত্বকে অংশগ্রহণমূলক বা পরামর্শমূলক নামেও পরিচিত। কারণ গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নেতার অনুসারী সদস্যের অংশগ্রহণ বা পরামর্শ রয়েছে। কিন্তু অনুসারীদের বিভিন্ন পরামর্শের মধ্য থেকে বিবেচনা করে সব সিদ্ধান্ত নেতার দ্বারা চূড়ান্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুসারীদের অংশগ্রহণ থাকায় তারা কাজের প্রতি উৎসাহিত হয়ে থাকে।
সুবিধা
- সদস্যরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে মধ্যে অংশগ্রহণ থাকায় তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়।
- সৃজনশীলতা ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ধারণা থাকায় উদ্ভাবনী সমাধানের জন্য মনোবল বৃদ্ধি পায়।
- এই নেতৃত্বে নেতা ও তার অনুসারীদের মধ্যে বিশ্বাস এবং স্বচ্ছতা সৃষ্টি হয়।
অসুবিধা
- সবার মতামত নেওয়া হয় বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হতে পারে।
- দ্রুত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অকার্যকর হতে পারে।
- অনেক মতবিরোধ থাকলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
৩. স্বাধীন নেতৃত্ব (laissez-faire/ free rein leadership):
এই নেতৃত্ব কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেক সদস্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমান অধিকার রয়েছে এবং তাদের পরামর্শগুলিকে নেতার দ্বারা সমানভাবে বিবেচনা করা হয়। এই প্রকার নেতৃত্বে সকল ধরণের সিদ্ধান্ত দলের সদস্যদের ওপর দিয়ে থাকেন । কিন্ত সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকার কারণে এই নেতৃত্ব বেশিরভাগ অকার্যকর হয়ে উঠে ।
সুবিধাঃ
- স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতার সুযোগ থাকায় উদ্ভাবনীর ধারণা সৃষ্টি হয়।
- দলের সদস্যদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীনতা বাড়ায়।
- বিশেষজ্ঞ পরিবেশের ক্ষেত্রে কার্যকর যেখানে কম নির্দেশনার প্রয়োজন।
অসুবিধাঃ
- ভূমিকা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থাকলে দিকনির্দেশনার অভাব দেখা দিতে পারে।
- যথাযথ তত্ত্বাবধানের অভাবে উৎপাদনশীলতা এবং দায়িত্বজ্ঞান কমে যেতে পারে।
- কম অভিজ্ঞ দলের জন্য কার্যকর নয়, যেখানে দিকনির্দেশনার প্রয়োজন।
৪. লেনদেন নেতৃত্ব শৈলী (transactional leadership):
এই নেতৃত্বে কর্মীদের পরিচালনার জন্য নেতা পুরস্কার বা শাস্তি ব্যবহার করে থাকেন । তাই এই নেতৃত্বে তার অধীনস্থ বা অনুসারীদের কাছ থেকে সর্বোত্তম কাজের কর্মক্ষমতা অর্জন করার জন্য পুরস্কার ও শাস্তির উপর নির্ভর করে ।
সুবিধাঃ
- সুনির্দিষ্ট প্রত্যাশা সৃষ্টি করে এবং পুরস্কার ভিত্তিক প্রণোদনার মাধ্যমে সদস্যদের উৎসাহিত করে।
- স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর।
- নিয়মিত কাজের জন্য স্থায়ী ও ধারাবাহিক পরিবেশে উপযোগী।
অসুবিধাঃ
- উদ্ভাবনীর পরিবর্তে নিয়মিত কাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ায় সৃজনশীলতার অভাব দেখা দেয়।
- বাহ্যিক প্রণোদনার উপর নির্ভর হওয়াতে দীর্ঘমেয়াদি উদ্দীপনা কমে যেতে পারে।
- সদস্যদের ব্যক্তিগত উন্নতিকে উৎসাহিত করে না।
৫. রূপান্তরমূলক নেতৃত্ব শৈলী (transformational leadership):
নেতৃত্বের এই ধরনে একজন নেতা সামগ্রিক সাফল্য অর্জন করার জন্য তার অনুসারী দলকে উৎসাহ করে থাকেন। সাংগঠনিক কাঠামোর পরিবর্তন, উদ্ভাবন এবং ভবিষ্যৎ গঠন করার জন্য নেতা কর্মীদের মধ্যে প্রেরণা দিয়ে থাকেন।
সুবিধাঃ
- দলের মধ্যে কাজ করার জন্য উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে।
- দলের সদস্যদের মধ্যে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং ভিন্ন দৃষ্টি প্রদানের প্রতি উৎসাহিত করে দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধি ও উন্নয়ন করেন।
- দৃঢ় সম্পর্ক এবং ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
অসুবিধাঃ
- অতিরিক্ত প্রত্যাশা তৈরি হলে কর্মীদের মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
- দলের কিছু সদস্যের মধ্যে প্রেরণা অকার্যকর হতে পারে।
- অবিচলিত দৃষ্টি ও শক্তির অভাবে দীর্ঘ সময়ের ক্ষেত্রে পরিচালনা করা সমস্যা হতে পারে।